আমার মৃত্যুর জন্য আমার স্বামী বা পরিবারের কারো কোন দোষ নেই। আমার স্বামী আমাকে অনেক মায়া মমতা করতো, আমি সংসারের কোন কাজ করতে পারি না। আমার ছেলে-মেয়েদের দেখে রাখে স্বামী। আমারে কেউ কোন কিছু করে নাই, আমার লাশ পুলিশে দিয়েন না। চিরকুটে এ সব কথা লিখে নিজ ঘরের বাশের আঁড়ার সঙ্গে তার গায়ের কালো ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৪ সন্তানের জননী নাছিমা বেগম (৩৫) নামে এক গৃহবধূ।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন ১৪ নং ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের পূর্ব পোয়া গ্রামে মিনা গাজীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর’২৩খ্রিঃ) সকাল আনুমানিক ১১হইতে ১২ টার মধ্যে ওই গৃহবধূর আত্মহত্যা করে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
খবর পেয়ে ঘরের আড়াঁর থেকে মরদেহ নামিয়ে সুরতহাল করার সময় চিরকুটটি উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ। নিহত গৃহবধূ নাছিমা বেগম মিনা গাজী বাড়ীর দিনমজুর হিরন মিয়ার স্ত্রী।
মৃতের বোন হাসিনা বেগম বলেন, গত ২০ বছর পূর্বে আমার বোনের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিনপর আমার দুলাভাই বিদেশে চলে যায়। কয়েকটি দেশ ঘুরে আসার পর আমার দুলাভাই ভালো কিছু করতে না পেরে গত ৭ বছর পূর্বে দেশে চলে আসে। সে থেকে আমার বোনের মাথায় সমস্যা সৃষ্টি হয়। সে মানসিকভাবে অসুস্থ্য। বিভিন্ন চিকিৎসকের দ্বারা চিকিৎসা করিয়েও ভালো হয়নি। আমার বড় ভাগ্নির বিয়ে হয়েছে, বাকিদের নিয়ে সব সময় চিন্তা করতো আমার বোন। আমার দুলাভাই দিন মজুরের কাজ করে, কখনো অটোরিকশা চালায়, আবার কখনো কৃষি কাজ করে। হঠাৎ আজকে জানতে পারি আমার বোন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
মৃত ওই গৃহবধূর মেয়ে লায়লা আক্তার (১০) বলেন, আমার মা অসুস্থ্য, আমি মাকে দুধ চা আর রুটি নিজ হাতে সকালে খাওয়াইছি। পরে দাদীর ঘরে গিয়েছি, সেখান থেকে ২ ঘন্টাপর ঘরে এসেছি আমি খাবার খাবো। তারপর দেখি আমার মা ফাঁসিতে ঝুলছে। পরে আমি চিৎকার দিলে আশে পাশের মানুষরা এসে ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। পরে ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোস্তফা পাটওয়ারী কে খবর দিলে তিনি থানা পুলিশকে খবর দেয়। থানা পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত গৃহবধূর স্বামী হিরন মিয়া বলেন, আজকে সকালে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়েছি। ধানুয়া এলাকায় থেকে মোবাইলের মাধ্যমে খবর পেয়ে ছুঠে এসেছি।
ফরিদগঞ্জ পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) প্রদীপ মন্ডল বলেন, গৃহবধূর আত্মহত্যার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সাব ইন্সপেক্টর খোকন ও এস আই মাহবুব গিয়েছে, একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক সিমটম দেখে এটিকে আত্মহত্যা বলেই মনে হয়েছে। তবুও মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply